নির্বাচনে জিততে আওয়ামী লীগের দুই কৌশল ফাঁস

চলতি বছর অক্টোবরেই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী দুই কৌশল নিয়ে আগাচ্ছে। প্রথম কৌশলটির ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয়েছে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের আদলে মহাজোট করবে। এই জোটে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের বাইরেও অনেক দল যুক্ত হবে, যার মধ্যে আছে এলডিপি, সিপিবি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। এছাড়া বামফ্রন্টও আসতে পারে এই জোটে। জোট করা হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিদের নিয়ে। এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই কথাবার্তা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। আর দ্বিতীয় কৌশলটি নেওয়া হবে বিএনপি নির্বাচনে না গেলে। জানা গেছে, নেতারা রাজি থাকলেও তৃণমূলের কারণে নির্বাচনে নাও যেতে হতে পারে বিএনপির। তৃণমূলের ভয়ে যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে না যায়, তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা ভাবে নির্বাচন করবে এবং একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। দ্বিতীয় কৌশলে জোটের সবাই আলাদা হয়ে মাঠে নেমে চাহিদামতো আসনে নির্বাচন করবে।

কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের মিত্র ছিল। গত নির্বাচনে তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মতপার্থক্য হয়। আর এই মতপার্থক্য দূর করতেই এগিয়ে এসেছেন প্রাক্তন সিপিবি কিন্তু বর্তমানে আওয়ামী লীগ এমন কয়েকজন নেতা। এদের মধ্যে আছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন। সিপিবির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তারা। সিপিবিও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধে এগিয়ে আসছে। রমজানে আওয়ামী লীগের ইফতার পার্টিতে জোটের বলয়ের বাইরের একমাত্র দল হিসেবে উপস্থিত ছিল সিপিবি। জানা গেছে, সিপিবির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কথাবার্তা চলছে।

সম্প্রতি দেখা গেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের থাকলেও লিবারেলর ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ অনেকটাই নীরব। ২০ দলের সাম্প্রতিক কোনো কর্মকাণ্ডের তাঁর উপস্থিতি চোখে পড়ে না। জানা গেছে, নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন অলি আহমেদ। এছাড়া, সম্প্রতি সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের বক্তব্য হলো, বিএনপিতে শক্তিশালী অবস্থানে থাকার পরও অলি আহমেদ শুধুমাত্র একটি কারণেই দল ছেড়েছেন, তা হলো যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বিএনপি সংশ্লিষ্টতা। আর এই কারণেই অলি আহমেদকে জোটে আনার পক্ষে আওয়ামী লীগ।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের যোগাযোগ অনেক পুরোনো। এমনকি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানার সঙ্গেও পারিবারিক ভাবে যোগাযোগ আছে কাদের সিদ্দিকীর। গত ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী কাদের সিদ্দিকীকে তো বাড়ি থেকেই ডেকে আনেন। তবে কাদের সিদ্দিকী হুটহাট বিতর্কিত কথা বলার জন্যও সমালোচিত। তাই আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা তাঁকে সরাসরি দলের না এনে বরং জোটে আনার পক্ষপাতী।

এছাড়া বিএনপি ত্যাগী তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাও সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে উপস্থিত দেখা যায় সাবেক বিএনপির এই ডাকসাইটে নেতাকে। তাঁকেও জোটে আনার পক্ষে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা। এর বাইরেও জোটবদ্ধ করতে আরও কিছু দলের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে আওয়ামী লীগের।

সর্বশেষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে একঘরে করার পাঁয়তারা করেছিল বিএনপি। ওই সময় আওয়ামী লীগ পাশে পায়নি সমমনা অনেককেই। এবার আওয়ামী একই রকম একঘরে করতে চাচ্ছে বিএনপিকে। আওয়ামী লীগ নীতি নির্ধারণী মহলের বক্তব্য হলো, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে তারা কেন দূরে দূরে থাকবে? এক ছাতার নিচে তারা আসতেই পারে।

সুৃত্র:ভোরের পাতা